পিরিয়ডের সময় সুস্থ থাকতে কী করবেন? জেনে নিন সঠিক পন্থা

পিরিয়ড কেয়ার – সুস্থতার জন্য করণীয় ও খাদ্যতালিকা

নারীদের জীবনের একটি স্বাভাবিক ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো মাসিক বা পিরিয়ড। অনেকেই এ সময়ে শারীরিক ও মানসিক অস্বস্তির সম্মুখীন হন। তাই পিরিয়ড চলাকালীন সঠিক যত্ন ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে পিরিয়ড চলা কালীন সুস্থ থাকার জন্য করণীয় ও উপযুক্ত খাদ্যতালিকা দেওয়া হলো।

পিরিয়ডকালীন করণীয়

১. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন

পিরিয়ড চলাকালে শরীর ক্লান্ত হয়ে যেতে পারে, তাই পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করা ভালো।

২. হালকা ব্যায়াম করুন

অনেকেই মনে করেন পিরিয়ডে ব্যায়াম করা ঠিক নয়, তবে হালকা যোগব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করলে ব্যথা কমে এবং রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়।

৩. প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন

শরীর হাইড্রেটেড রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত জল, ডাবের জল, লেবু জল ও হারবাল চা পান করুন, যাতে শরীর সতেজ থাকে ও অস্বস্তি কমে।

৪. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন

নিয়মিত স্যানিটারি ন্যাপকিন, ট্যাম্পন বা মেনস্ট্রুয়াল কাপ পরিবর্তন করা উচিত, যাতে ইনফেকশন এড়ানো যায়। প্রতিবার ব্যবহার করার আগে ও পরে হাত ধুয়ে নেওয়া উচিত।

৫. মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন

পিরিয়ড চলাকালে অনেক নারী আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন, তাই রিলাক্সিং মিউজিক শোনা, মেডিটেশন করা, বই পড়া বা হালকা মুভি দেখা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।

পিরিয়ডের সময় সুস্থ থাকতে কী করবেন” এই সময় কি কি খাবার খাওয়া ভালো । যেমন,-

পিরিয়ডকালীন উপযুক্ত খাদ্যতালিকা

শরীরের সুস্থতার জন্য সঠিক পুষ্টি গ্রহণ করা জরুরি। পিরিয়ড চলাকালে কিছু খাবার ব্যথা ও অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

১. আয়রনসমৃদ্ধ খাবার

পিরিয়ডের সময় শরীর থেকে রক্ত বের হয়ে যাওয়ার ফলে আয়রনের অভাব দেখা দিতে পারে। তাই পালং শাক, বিটরুট, ডাল, ডিম, লাল মাংস ও বাদাম খাওয়া উচিত।

২. ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত খাবার

পেটের ব্যথা কমাতে ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন কলা, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, তিল ও ডার্ক চকলেট খেতে পারেন।

৩. ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড

ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছ, আখরোট ও অলিভ অয়েল খেলে ব্যথা কমে।

৪. ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার

কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে শাকসবজি, ফল, ওটস ও বাদাম খাওয়া উচিত।

৫. ভেষজ চা ও প্রাকৃতিক পানীয়

গ্রিন টি, আদা চা ও ক্যামোমাইল চা পিরিয়ডের অস্বস্তি দূর করতে সহায়তা করে। আদা ও গরম জল পেটের ব্যথা কমাতে ভালো কাজ করে।

পিরিয়ডে পরিহারযোগ্য খাবার

  • ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় (কফি, সফট ড্রিঙ্ক) – এটি হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।
  • অতিরিক্ত চিনি (মিষ্টি, চকলেট) – এটি ইনসুলিনের তারতম্য ঘটিয়ে ব্যথা বাড়াতে পারে।
  • ফাস্ট ফুড ও অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার – এটি জল ধরে রাখার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়, যা ফোলাভাব সৃষ্টি করতে পারে।
  • দুগ্ধজাত খাবার – অনেকে পিরিয়ডের সময় দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার খেলে গ্যাস ও অস্বস্তি অনুভব করেন।

উপসংহার

পিরিয়ড চলাকালীন সঠিক খাদ্য ও জীবনযাত্রা অনুসরণ করলে শারীরিক ও মানসিক অস্বস্তি অনেকটাই কমে যায়। সুস্থ থাকতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাবার ও হালকা ব্যায়াম করুন। নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা মেনে চললে ইনফেকশন ও অন্যান্য সমস্যা থেকে দূরে থাকা সম্ভব। পিরিয়ডের সময় সুস্থ ও স্বস্তিদায়ক অনুভূতির জন্য উপযুক্ত খাদ্যতালিকা ও জীবনধারা অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Comment